নূরুল হক, মণিরামপুর প্রতিনিধিঃ

স্বাধীনতার পর থেকে মণিরামপুর উপজেলার ভবদহপাড়ের কপালিয়া বাজারে সরকারি আড়াই একর জমি দখলের পর অধ্যাবধি পর্যন্ত দেড় শতাধীক দোকান নির্মান করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে এলাকার প্রভাবশালীরা অধিকাংশ জমি দখলের পর সেখানে দোকান-পাট নির্মান করেই ক্ষ্যান্ত হয়নি। তারা এখন দখলকৃত জমির পজিশন বিক্রি করছেন। কোটি কোটি টাকার সরকারি সম্পত্তি রক্ষার জন্য এলাকাবাসী বেশ সোচ্চার হলেও প্রশাসন এ ব্যাপারে যথাযথ ভূমিকা নিচ্ছেননা বলে অভিযোগ রয়েছে।

তথ্যানুসন্ধানে জানাযায়, মণিরামপুর উপজেলার ভবদহের শ্রীনদীর তীরে অবস্থিত কপালিয়া বাজারটি। দেশ স্বাধীনের পর এ বাজারে এজের গাজী, আবদুল গফুর, আবদুর রহিম ও আবদুল করিমসহ ৫/৬ জনের ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে কয়েকটি দোকান গড়ে ওঠে। অথচ আড়াই এশর (দুই শত পঞ্চাশ শতক) জমিই সরকারি খাস খতিয়ানভূক্ত। এরমধ্যে অধিকাংশ জমি পানি উন্নয়ন বোর্ডের। অভিযোগ রয়েছে যখন যে সরকার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকে, তখন সে সময়কার সরকারি দলের ছত্রছায়ায় থেকে প্রভাবশালীরা বাজারের জমি দখল করে সেখানে পাকা স্থাপনাসহ দোকান-পাট নির্মান করে আসছে।
মনোহরপুর ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানাযায় , কপালিয়া বাজারে বর্তমান পাকা ও অর্ধপাকা দোকানের সংখ্যা রয়েছে ১৫০ টির অধিক। এরমধ্যে তৌহিদ সরদার, রফিক সরদার, মহির গাজী, কবির গাজী, সুলতান সরদার, সাত্তার মোল্যা, পরিতোষ ঘোষ, রহমান সরদার, সালাম বিশ্বাস, লুৎফর গাজী, মশিয়ার রহমান, জাহিদ হোসেন, সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান, আকতার ফারুক মিন্টু, মিজানুর রহমান মিজান,আবদুল লতিফ, হাসান আলী, রেজোয়ান সহ অন্যান্য প্রভাবশালীরা সরকারি জমি দখলের পর সেখানে প্রায় দেড় শতাধীক দোকান নির্মান করে ব্যবসা করে আসছেন।
কপালিয়া বাজার কমিটির বর্তমান সভাপতি মনোহরপুর ইউপি চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা মশিয়ুর রহমান জানান, দীর্ঘদিন ধরে এলাকার প্রভাবশালীরা ক্ষমতার দাপটে সরকারি জমি দখলের পর দোকান-পাটসহ অন্যান্য স্থাপনা নির্মান করে আসছেন। তিনি দাবি করেন, দোকান নির্মানে বাঁধা দিলেও তারা কোন কর্নপাত করেনি। আবার এদের মধ্যে জাহিদ হোসেন, শাহিনুর রহমানসহ কয়েকজন দাবি করেছেন তারা ইতিপূর্বে জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে জমি সাময়িক বন্দোবস্ত নিয়েছিলেন। তবে তারা বন্দোবস্তের কোন বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেনি।
সরেজমিন খোজখবর নিয়ে জানাযায়, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আ’লীগ নেতা আবদুল মান্নান ও তার ভাতিজা ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি জাহিদ হাসান কপালিয়া বাজারের সরকারি জমি দখল করে সেখানে স্থাপনা নির্মান করেন। আবার সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আকতার ফারুক মিন্টুও অনুরূপভাবে জমি দখলের পর পাকা স্থাপনা নির্মান করেন। শুধু আবদুল মান্নান, আকতার ফারুক মিন্টু অথবা জাহিদ হাসান নয়। ইতিমধ্যে তাদের মত হাসান আলী, সায়ফুল ইসলাম, আবদুর রহমান, বাহারুল ইসলাম, সালাম বিশ্বাস, লুৎফর রহমান, মইন খন্দকার, আবদুস সাত্তার, মোবারক গাজী, শামছুর রহমান, ডা:হরেন, অশ্বিনী কুমার, হাশেম আলী, সাত্তার গাজী, মোশাররফ হোসেন, মহির উদ্দিন, আব্বাস উদ্দিন, আবদুস সামাদ, সিদ্দিকুর রহমান, খোরশেদ আলীসহ প্রায় অর্ধশত ব্যক্তি সরকারি জমি দখলের পর লাখ লাখ টাকায় অন্যদের কাছে পজিশন বিক্রি করেছেন। তবে সরকারি জমির পজিশন বিক্রির কোন সদুত্তর দিতে পারেননি বিক্রয়কারীরা। আবার তাদের কাছ থেকে পজিশন ক্রয়ের পর সেখানে নতুন করে দোকান নির্মান করেছেন আবুল বাশার, রফিকুল ইসলাম, আবদুর রাজ্জাক, আব্দুল্লাহ আল মামুন, পরিতোষ ঘোষ, লুৎফর রহমান, সুজিত সাহা, সুলতান হোসেন, আইয়ুব হোসেন, তৌহিদুর রহমান, হেজাজ উদ্দিন, সিরাজুল ইসলাম, রেজোয়ান হোসেন, পল্লী চিকিৎসক আবদুল হালিম, আনোয়ার হোসেনসহ আরো অনেকে।
সরকারি জমি দখল করে দোকান নির্মান প্রসঙ্গে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ নেতা আবদুল মান্নান জানান, কপালিয়া বাজারের অধিকাংশ দোকান সরকারি জমিতে। ফলে সরকার চাইলে অবশ্যই দোকান সরিয়ে নেওয়া হবে। ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আকতার ফারুক মিন্টু জানান, বর্তমান বাজারে তার কোন দোকান নেই। তবে সরকারি জমিতে নির্মিত দোকানটির পজিশন তিনি ২০০৮ সালে কবির হোসেন নামে এক ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করার দাবি করেন ।
ভবদহ সংগ্রাম কমিটির নেতা ও জেলা জলমহল ব্যবস্থাপনা কমিটির মৎস্যজীবী প্রতিনিধি পরিতেষ সরকার জানান, সরকারি জমি দখলের পর পজিশন বিক্রি বন্ধ করতে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হলেও বাস্তবমুখি কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। অপর নেতা গোলাম মোস্তফা জানান, আইনগত কোন পদক্ষেপ না নেওয়ায় প্রভাবশালীরা নতুন নতুন জমি দখল করে স্থাপনা নির্মান এবং পজিশন বিক্রিতে উৎসাহিত হচেছ। এ ব্যাপারে সোচ্চার হয়ে এলাকাবাসী বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেছেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দ জাকির হাসান জানান, খাস খতিয়ানের জমি পুন:উদ্ধারের জন্য সহকারি কমিশনার(ভূমি) হরেকৃঞ্চ অধিকারীকে ইতিমধ্যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অপরদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহিদুল ইসলাম জানান, ইতিমধ্যে কপালিয়া বাজারে পাউবোর জমিতে অবৈধ দখলদারদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে দ্রæত সময়ের মধ্যে দখলকারীদের উচ্ছেদের ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।